এম এ হান্নান, পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় কোদালিয়া সহরুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে গোলাম মোস্তফা নামে একজন কে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলামের মাসুদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাউসিতে কর্মরত সাবেক সভাপতি মাসুদের সহায়তায় এমপিও প্রাপ্তির আবেদন করারও অভিযোগ রয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বিরুদ্ধে।
নিয়োগকে কেন্দ্র করে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় দশ বছর যাবত বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন যাবত এছাড়াও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে বন্ধ রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট থাকায় শতবছরের পুরোনো এ বিদ্যালয়টির পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সঙ্কট নিরসনের দাবী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কোদালিয়া সহরুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সালেহ আহম্মেদ এর মৃত্যুজনিত কারনে প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য হয়। পরে ২০১৪ সালে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হক মাসুদ গোলাম মোস্তফা নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন মিলে ওই শিক্ষক কে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়। এতে দুটি পক্ষের লোকজনের মাঝে কয়েক দফা হাতাহাতি হয়। এর জেরে এবং নিয়োগের বৈধতা চ্যালেন্স করে উভয়পক্ষ পাল্টা পাল্টি একাধিক মামলা করে।
একটি মামলার বাদি এবং ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মোঃ হাফিজ উল্লাহ বলেন, ২০১৪ সনে অনৈতিকভাবে নির্বাচিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হক মাসুদ তার অবৈধ হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন যাবৎ নানা প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে উক্ত নিয়োগের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ আরও দুই জন সহকারী শিক্ষক কিশোরগঞ্জ জেলা সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো বলেন, জালিয়াতির মামলায় সাবেক সভাপতি মাজহারুল হক মাসুদ ও তার অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলা ম্যাজিষ্টেড আদালত থেকে গত ২৪/০৮/২০২৫ খ্রি. তারিখ সমন জারি করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ২৬/১০/২০২৫ খ্রি. তারিখে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিদ্যালয়ে চাকুরি নেই এবং যোগদান করে শিক্ষকদের বেতন ও বোনাসে স্বাক্ষর করি। যোগদানের দেড় মাস পর কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন মিলে আমাকে বিদ্যালয়ে আসতে বাধা দেয়। আমি কয়েক দফায় বিদ্যালয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হই। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরার চেষ্টা করছি।
পার্শ্ববর্তী কালিয়াচাপরা চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, ওই বিদ্যালয়টি শতাধিক বছরের পুরোনো এবং ইতিহাস ঐতিয্য বহন করে আসছে। বর্তমানে প্রায় হাজারো শিক্ষার্থী রয়েছে এই স্কুলে। বেশ কয়েক বছর যাবত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কে কেন্দ্র করে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তী তথা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বেঘাত ঘটছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্ব্য় না করে সাবেক সভাপতি মাজহারুল হক মাসুদ একক ক্ষমতাবলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এজন্যই বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ মাকছুদা আক্তার বলেন, মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারনে এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ মেয়াদী সংকটে পড়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ আদালতের দারস্থ হয়েছে, তাই এই বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আদালত থেকেই নিস্পত্তি করতে হবে।
Leave a Reply